Sunday, April 9, 2017

মাঝরাতে ফেসবুক বন্ধ হলে কী হতে পারত

অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, রাতে মানুষের উচ্চমার্গীয় চিন্তাচেতনার উদ্ভব হয়। আমাদের যুবসমাজ ভোর১০-১১টায় ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে সন্ধ্যা৯-১০টা পর্যন্ত কঠোর সাধনায় ব্যস্ত থাকে। সুতরাং রাত ১২টার পর থেকে তাদেরদুনিয়াটা কী থাইকা কী হয়া গেল! চারপাশে খালি আজাইরা গুটিবাজ’-টাইপের স্ট্যাটাসে টাইমলাইন ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে। এ সময় ফেসবুক বন্ধ থাকায় যদি এত ভারী কথা আটকে থাকে, তাহলে সেগুলো দিনের বেলায় কথার মাধ্যমে আমজনতার কর্ণকুহরে ডেলিভারি হবে। ফলে দেশ বুদ্ধিজীবীর আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যেতে পারে।

এই, পান্থপথ যাবা?
অ্যাঁ...পান্থপথ? কী আজব নাম, দেখছেন? পান্থ মানে পথিক, পথিকের পথ। তার মানে হাঁইটা যাইতে হইব।
এঁকেছেন শিখাসারা দিন মেমোরিভর্তি সেলফি তুলে রেখে সেগুলো বাছাই, এডিটিং শেষ করে রাতে প্রোফাইল পিকচার, টাইমলাইন ফটো হিসেবে আপলোড করা হয়। আর আপলোডের সময় যদি ফেসবুক বন্ধ থাকে, তাহলে সেলফিজীবীরা সেগুলো প্রিন্ট করে ওয়ালে, অর্থাৎ বাসাবাড়ির দেয়ালে পোস্ট করবে। তাতে বিলবোর্ড ভাড়ার মতো দেয়াল ভাড়া শিল্প গড়ে উঠবে।
আঙ্কেল, দেখেন রেটটা একটু কমানো যায় কি না। মানে আমরা ছাত্র মানুষ, বাজেট কম...
দেয়ালে রেট কম-সম নাই, তোমাদের আগে দুইটা গ্রুপরে ফিরায়া দিছি। অবশ্য ওই আমগাছটায় লাগাইলে একটু কম রাখমুনে।
এঁকেছেন শিখাদীর্ঘদিন রাতজাগার অভ্যাসের কারণে তরুণ ও যুবসমাজ রাতে ঘুমাতে পারে না। অথচ ফেসবুক না থাকলে সময় কাটবে কীভাবে? শেষে বিকল্প হিসেবে তারা বুক, অর্থাৎ সত্যিকারের বই ফেস করবে এবং দেশে বইয়ের পাঠকসংখ্যা বোল্টের গতিতে বাড়বে।
কী রে, বইকে পোক করছিস নাকি?
আরে নাহ্, ছবিটা সুন্দর লাগছে, ডাউনলোড দিতে চাচ্ছি, কিন্তু অপশন আসতেছে না!
এঁকেছেন শিখামাঝেমধ্যেই আমাদের দেশীয় রোমিওদের অসাধারণ নৈপুণ্যে সত্যিকারের জুলিয়েটরা নানান দেশ থেকে চলে আসেন। আর সবার কাহিনি জানা গেছে, ফেসবুকের মাধ্যমে তাঁদের পরিচয়, অতঃপর...ফরম্যাটের। বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগটা সাধারণত রাতেই হয়ে থাকে। অথচ এই মোক্ষম সময়ে ফেসবুক বন্ধ থাকলে এ রকম আন্তর্জাতিক প্রণয় বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
দোস্ত, কিসের চিন্তা করিস? তোর আমেরিকান গার্লফ্রেন্ড কবে আসবে কিছু বলছে?
মন-মেজাজ ভালো না। ও আসলে ইন্ডিয়ান, ভুয়া পরিচয় দিছে এপ্রিল ফুল বানানোর লাইগা। তাই তো কই, এখানে যখন দিন, তখন সে অ্যাকটিভ থাকে ক্যান?
এঁকেছেন শিখাঅভ্যাসবশত স্ট্যাটাস বা সেলফি আপলোড করতে না পারলে অনেকেই ঝামেলায় পড়ে যাবেন। আর তাই ফেসবুক ওয়ালের অভাব ঘোচাবেন তাঁরা ঘরের ওয়াল ব্যবহারের মাধ্যমে। চাহিদা বেড়ে যাবে রংমিস্ত্রিদের।
দুই দিন আগেই না ঘরটা রং কইরা দিয়া গেলাম!
আর বইলেন না, ভাই! পুরানা অভ্যাস তো, সহজে কি ছাড়া যায়, বলেন?
এঁকেছেন শিখাআমাদের দেশের উর্বর মাটির সন্তানদের মস্তিষ্কও এতই উর্বর যে নানান কিসিমের অসাধারণ যোগ্যতা দ্রুত গজিয়ে যায়। যেমন ফেসবুক আইডি হ্যাক করা, ঘরে বসে মিনিটে হাজার টাকা ইনকাম পদ্ধতি উদ্ভাবন, ২৪ ঘণ্টা লাইক দেওয়ার সক্ষমতা ইত্যাদি। সরকার ফেসবুক বন্ধ রাখবে আর এই মেধাবী জনগোষ্ঠী যোগাসনে বসে বসে দেখবে, তা হতে পারে না। তথ্যপ্রযুক্তিকে প্যাঁচে ফেলে তারা বিকল্প পদ্ধতিতে ফেসবুক ব্যবহার-তত্ত্ব দেশ ও দশের মধ্যে ছড়িয়ে দেবে।
শোনেন, এইটা অনেকটা ঘরের সিঁদ কাইটা ঢোকার মতো ব্যাপার। প্রক্সি সার্ভার... আইএসপি... ভিপিএন...বকবক।
ভাইজান, এখানে যিনি বসেন, তিনি কে? কোনো সাইনবোর্ড তো দেখলাম না।
উনি বিশিষ্ট ফেসবুকেট’, বন্ধ থাকার পরও পল্টি দিয়া ফেসবুকিংয়ের রাস্তা বাতলায়া দেন।


No comments:

Post a Comment

Sponsor