Friday, January 6, 2017

১২টার পর ১৩টা, না ১টা?


সময় পরিমাপে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থায় ১২টার পর ১৩টা হয়। কিন্তু দেশীয় ব্যবস্থায় ১২টার পর ১টা হয় কেন—এই প্রশ্নের উত্তর দিতে না–দিতেই অতিথিদের উদ্দেশে আরেক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন, পৃথিবী এখন নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল। এ নেটওয়ার্ক কোনো কারণে ধ্বংস হয়ে গেলে কী হবে? আবার কারও জিজ্ঞাসা ছিল, উনত্রিশ, উনচল্লিশ, উনপঞ্চাশ হয় কিন্তু উনদশ ও উনবিশ হয় না কেন? গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রামে ‘ডাচ্-বাংলা ব্যাংক-প্রথম আলো গণিত উৎসব’–এর প্রশ্নোত্তর পর্বে এ রকম বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করে অতিথিদের তাক লাগিয়ে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

‘গণিত শেখো স্বপ্ন দেখো’ স্লোগানে নগরের সেন্ট প্লাসিডস স্কুল ও কলেজ মাঠে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক গণিত উৎসবে অংশ নেয় চট্টগ্রাম, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থী। উৎসবে ছিল পরীক্ষা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রশ্নোত্তর পর্ব, রুবিকস কিউবসহ নানা আয়োজন।
সকাল সাড়ে নয়টায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সেন্ট প্লাসিডস স্কুল ও কলেজের উপাধ্যক্ষ ব্রাদার রিংকু লরেন্স কস্তা। তিনি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট কে এম এজাজ। গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা উত্তোলন করেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী। পতাকা উত্তোলনের সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বন্ধুসভার সদস্যরা। তাঁরা উৎসব সংগীতও গেয়ে শোনান।
উৎসবে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ্ জানতে চান, ‘তোমরা গণিত নিয়ে কে কে স্বপ্ন দেখো? কী স্বপ্ন দেখো?’ হাত তুলে শিক্ষার্থীরা জানায়, গণিত নিয়ে তারা বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখে। এরপর তিনি বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো বিজ্ঞান ও গণিত ব্যবহার করে উন্নত প্রযুক্তি তৈরি করছে। তোমাদের গণিত ও বিজ্ঞান নিয়ে ভাবতে হবে। দেশকে উন্নত করতে হবে।’
উদ্বোধনের পর গণিতের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর প্রশ্নোত্তর পর্বে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্রী মুমতাহিনা সুলতানার প্রশ্ন ছিল, ২৯ কে উনত্রিশ, ৩৯ কে উনচল্লিশ, ৪৯ কে উনপঞ্চাশ বলা হয়। কিন্তু ৯ কে উন দশ, ১৯ কে উন বিশ বলা হয় না কেন? অতিথিরা উত্তর দেন, প্রথম থেকেই এসব সংখ্যার এভাবেই নামকরণ করা হয়েছে।
সুজন কুমার দাশ নামের আরেক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ছিল, আন্তর্জাতিক রীতিতে ১২টার পর ১৩টা হয়, কিন্তু দেশীয় রীতিতে ১টায় হয় কেন? তার প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষক বলেন, এটি ‘টাইম ফরম্যাট’ (সময় ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি)।
কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্র আহসান হাবীবের প্রশ্ন ছিল, বর্তমান পৃথিবী ক্রমান্বয়ে নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। এক শ বছর পর কোনো কারণে এ নেটওয়ার্ক ধ্বংস হয়ে গেলে তখন কী হবে? শিক্ষকেরা বলেন, তখনো একটি নেটওয়ার্ক থেকে যাবে। আর সেটি হচ্ছে ‘হিউম্যান নেটওয়ার্ক’। মানুষের এ নেটওয়ার্ক কখনো ধ্বংস হবে না।
এক শিক্ষার্থীর প্রশ্ন ছিল, কোনো সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে গুণ করলে সব সময় শূন্য হয় কেন? কারও প্রশ্ন ছিল, পৃথিবীতে একটি শিশুর জন্ম নিতে নয় মাস লাগে, তাহলে মহাশূন্যে কত দিন লাগবে?
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সাবিহা তাবাসসুমের লিখিত প্রশ্ন, ‘গণিত অলিম্পিয়াডে আমি চ্যাম্পিয়ন হতে চাই। কী করতে হবে?’ অতিথিরা তাকে বলেন, নিয়মিত পড়তে হবে। চিন্তা করতে হবে। গণিত বই ভালো করে পড়তে হবে।
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ্, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মো. হানিফ সিদ্দিকী, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক কৌশিক দেব, অধ্যাপক সুনীল দেব ও সহযোগী অধ্যাপক উজ্জ্বল কুমার দেব, প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইফতেখার মনির, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান তৌফিক সাঈদ, বুয়েটের সহযোগী অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, প্রথম আলোর যুব উন্নয়ন কর্মসূচির সমন্বয়ক মুনির হাসান।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনায় এই উৎসবের আয়োজক বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি। আয়োজনে সহযোগিতা করে প্রথম আলো বন্ধুসভা চট্টগ্রাম। উৎসবে শিক্ষার্থীরা মিথ্যা, মুখস্থ ও মাদককে না বলার শপথ নেয়।
পুরস্কারচট্টগ্রাম আঞ্চলিক গণিত উৎসব থেকে এবার মোট ১১৭ জন প্রতিযোগী জাতীয় পর্যায়ে অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। অতিথিরা তাদের হাতে সনদ ও পদক তুলে দেন। প্রাথমিক শাখায় (তৃতীয়-পঞ্চম শ্রেণি) বিজয়ী হয় ৩৫ জন। তাদের মধ্যে সেরা হয়েছে ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী লামিয়া তারান্নুম। নিম্নমাধ্যমিক শাখায় (ষষ্ঠ-অষ্টম) পুরস্কার পেয়েছে ৩১ শিক্ষার্থী। সেরা হয়েছে ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মামনুন সিয়াম। মাধ্যমিক শাখায় (নবম-দশম) পুরস্কার পেয়েছে ২৭ শিক্ষার্থী। সেরা হয়েছে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ নাফিস রহমান। উচ্চমাধ্যমিক শাখায় (একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি) ২৪ শিক্ষার্থী বিজয়ী হয়েছে। যৌথভাবে সেরা হয়েছে ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী ও হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের মেহেদী হাসান।

No comments:

Post a Comment

Sponsor