ইরিনা আক্তার ও শারমিন আক্তার দুই বোন। জন্ম থেকে দুজনই বাক্প্রতিবন্ধী।
কানেও শুনতে পায় না তারা। তবু তারা পড়ছে সাধারণ বিদ্যালয়ে। অন্যসব
শিক্ষার্থীর মতো শিক্ষকের কথা শুনতে পায় না তারা। তবু শোনা ও বলার বাধা
ডিঙিয়ে এবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়েছে
তারা। জীবনের প্রথম এই পরীক্ষায় পাস করেছে দুজনই।
চট্টগ্রামের
সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাইছড়ি গ্রামের আবদুল আজিজের
বাক্প্রতিবন্ধী দুই মেয়ের সাফল্যে খুশি পরিবারের সদস্য ও গ্রামের লোকজন।
উপজেলার শীতলপুরে অবস্থিত মোস্তফা হাকিম কেজি অ্যান্ড জুনিয়র হাইস্কুলের
ছাত্রী তারা। স্থানীয় একটি পাটকলের শ্রমিক আবদুল আজিজের তিন মেয়ে দুই ছেলের
মধ্যে ইরিনা তৃতীয় ও শারমিন চতুর্থ।
গত বুধবার ইরিনা ও শারমিনের বাড়িতে
গেলে কথা হয় তাদের বাবা আবদুল আজিজের সঙ্গে। দুই বোনের সঙ্গে ইশারায়
ভাববিনিময় করছিলেন তাদের বাবা। কথা বলতে চাইলে তিনি কাগজে লিখে প্রশ্ন করার
পরামর্শ দেন। এরপর কাগজে লিখে লিখেই কথাবার্তা চলল তাদের সঙ্গে।
সমাপনী
পরীক্ষায় ইরিনা পেয়েছে জিপিএ ৩ দশমিক ৩৩ এবং শারমিন ২ দশমিক ২৮। বড় হয়ে কী
হতে চাও, এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ইরিনা লিখেছে, ‘শিক্ষক’ এবং শারমিন
লিখেছে, ‘মানুষের মতো মানুষ’।
আবদুল আজিজ প্রথম আলোকে বলেন,
সীতাকুণ্ডে বাক্প্রতিবন্ধীদের জন্য কোনো আলাদা স্কুল নেই। শহরের
প্রতিবন্ধী স্কুলে পড়ালেখা করানোর মতো সামর্থ্য তাঁর নেই। তাই ঘরে বসিয়ে না
রেখে মেয়েদের সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। পরিবারের অন্যসব সদস্য দুজনের
সঙ্গে আকার-ইঙ্গিতে কথা বলে। তাদের পড়াশোনায় খেয়াল রাখে তাদের বড় বোন
রোকেয়া বেগম। সে চট্টগ্রাম নগরের মোস্তফা হাকিম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের একাদশ
শ্রেণির ছাত্রী।
আবদুল আজিজ বলেন, তাঁর দুই মেয়ের জন্য বিদ্যালয়ের
প্রধান শিক্ষক নিয়মিত ক্লাসের বাইরেও বেশি সময় দেন। তাই তারা পাস করেছে।
তবে কানের চিকিৎসা হলে এবং শ্রবণযন্ত্র লাগানো হলে তারা আরও ভালো করত বলে
মন্তব্য করেন তিনি।
আবদুল আজিজ আরও বলেন, দুই মেয়ের কানে শ্রবণযন্ত্র
(হিয়ারিং এইড) স্থাপন করলে তারা শুনতে পাবে বলে চিকিৎসকেরা মত দিয়েছেন। তবে
এ জন্য অন্তত ৬০ হাজার টাকা প্রয়োজন। টাকা জোগাড় না হওয়ায় এখনো চিকিৎসা
শুরু করতে পারেননি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন,
দুই বোনের অভিভাবককে বুঝিয়ে স্কুলে ভর্তি করান তিনি। ক্লাসের বাইরেও তাদের
অতিরিক্ত সময় পড়িয়েছেন। ফলে তারা ভালো ফল করেছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন,
এ দুই ছাত্রী পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রতিবন্ধী সুবিধা পায়নি। যদি তাদের আরও সময়
বেশি দেওয়া হতো তারা আরও ভালো ফল করত।
জানতে চাইলে উপজেলা শিক্ষা
কর্মকর্তা মো. নুরুচ্ছোফা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্ভবত ফরম পূরণের সময় কোনো
ভুল হয়েছে। যার কারণে তারা প্রতিবন্ধী–সুবিধা পায়নি তারা। তবে বিষয়টি আমি
পুরোপুরি জানি না।’
তিনি আরও বলেন, সাধারণ বিদ্যালয় থেকে বাক্প্রতিবন্ধী
দুই ছাত্রীর সমাপনী পরীক্ষায় পাস করা অনেক বড় কৃতিত্ব। এই ফলাফলই তাদের
জন্য ‘জিপিএ-৫’–এর সমান। দুই শিক্ষার্থীকে চিকিৎসার জন্য তাঁর দপ্তরের
প্রতিবন্ধী সহায়তা তহবিল থেকে সহায়তা করা হবে বলে জানান তিনি।
No comments:
Post a Comment