দুই তরুণ আলাপ করছে।
-হ গতবার নিয়ে ঠকছিলাম।
-ইলিয়াস ভাইয়ের ‘জিনিস’ কেমন?
-আরিফ বলল, ওর কাজিনের ফ্রেন্ড গত বছর নিয়ে ‘কমন’ ফালাইছিল।
-চল তাহলে ইলিয়াস ভাই থেকে নিই!
না। তারা দু’জন মাদকবিষয়ক কোনো আলাপ করছে না। অথবা কোনো স্যারের বা কোচিংয়ের বড় ভাইয়ের সাজেশন নিয়েও আলাপ করছে না। তারা আলাপ করছে ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্র নিয়ে। এইখানেও ব্র্যান্ড ভ্যালু রয়েছে। সবারটা ১০০% বিশুদ্ধভাবে কমন পড়ে না। অচিরেই হয়তো দেখা যাবে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো পরীক্ষার আগে মেসেজ পাঠাচ্ছে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের প্রশ্নপত্র পেতে লগইন করুন িি.িভধংযঢ়ৎড়ংযহড়.পড়স অথবা মযধ লিখে মেসেজ করুন ৪২০ নম্বরে। প্রশ্ন ফাঁস করে এমন বিভিন্ন কোম্পানি, বিভিন্ন ব্র্যান্ড চলে আসবে বাজারে। তাদের বিজ্ঞাপনও থাকতে পারে-"প্রশ্ন কিনে ঠকার দিন শেষ, ১০০% কমনের গ্যারান্টি নিয়ে, কিনুন ১০০% হালাল প্রশ্ন... শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুমোদিত দেশের একমাত্র বৈধ
প্রশ্নফাঁসকারী কোম্পানি- হাঁসফাঁস!"
প্রশ্নপত্র বিক্রির ব্যাপারটা আর গোপনে না করলেই ভালো। সবাই যেহেতু জানে বিষয়টা, কী দরকার কোমলমতি পরীক্ষার্থীদের টেনশনে রাখার! বেচারারা পরীক্ষার আগের রাতে প্রশ্ন খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে যায়। আগে ‘পরীক্ষার আগের রাত’ নামক রচনায় লিখতে হতো পরীক্ষার আগে রাতে কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছে, কিভাবে পড়ে সব শেষ করে টেনশন করেছে এই সব। এখন লেখা থাকবে পরীক্ষার আগের রাতে কী কী হয়রানির শিকার হয়ে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করতে হয়েছে তা নিয়ে। টাকার হয়রানিটাও একেবারে কম নয়। পরীক্ষার্থীরা প্রশ্নপত্রের দাম কমানোর দাবি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর সংবাদপত্রে চিঠি লিখতে পারে। আমাদের মন্ত্রণালয় নিশ্চয়ই বিষয়টা ভেবে দেখবেন। যদি মেনে না নেন তবে প্রশ্নপত্র কেনার জন্য পিতার নিকট পত্র লেখা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
তরুণদের আলাপে ফিরে যাই। তারা বেশ বিমর্ষ। প্রশ্নপত্রের কোনো সমাধান হয়নি। কাকে যেন ফোন দিয়েছে-
-হ্যালো মুকুল! তুই প্রশ্নপত্র পাইছিস না?
-হ্যাঁ
-দোস্ত ছবি তুলে কুইক ম্যাসেঞ্জারে পাঠা।
-নারে দোস্ত। এইটা একজনের জন্য একটা। ওই যে দেখস রেজিস্ট্রেশন করা এন্টিভাইরাস একটা পিসিতে চলে তেমন!
-দোস্ত দে না। কোথাও পাইতেছি না। আচ্ছা যা অর্ধেক দে। বাকিটা আমি অন্য কোথাও থেকে ম্যানেজ করে নিব।
-অর্ধেকের জন্য দশ হাজার লাগবে...
ছেলেটা দশ হাজারে রাজি হয়ে ফোনটা রেখে দিল। পাশেই তার বন্ধু কাহিনী জানার জন্য উদগ্রীব হয়ে তাকিয়ে আছে। মুখটা কালো কালো করে বলল, ‘দোস্ত, মুকুল কোয়েশ্চেনের ২৫% দিতে রাজি হইছে। ২০ হাজার টাকা দিতে হবে। তুই দশ দে আমি দশ দিই।’ ছেলের বিজনেস জ্ঞান দেখে যে কেউ অবাক
হবে। বিবিএর কোনো শিক্ষক বিষয়টা
জানলে পরীক্ষা নেয়া ছাড়া ওকে ভর্তি
করিয়ে নিতেন।
তবে প্রশ্ন ফাঁস ভালো দিকগুলোর কথাও ভুলে গেলে চলবে না। এক সমীক্ষায় জানা যায়, প্রশ্ন ফাঁসের কারণে প্রতি বছর কয়েক লাখ ছেলে-মেয়ের মন ভালো থাকে, ফুরফুরে থাকে, পড়ালেখা করে সময় অপচয় না করে নানা ধরনের সৃজনশীল কাজ করতে পারে।
এ ছাড়া প্রতি বছর হাজার হাজার কোমলমতি পরীক্ষার্থীর সাফল্যে তো একেবারে মিথ্যে না। এ জন্য বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখার জন্য জাতীয় পুরস্কার দেয়া উচিত।
শুধু এতেই শেষ না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবদান পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতে হবে তাদের অবদান। ছাত্ররা যাতে তাদের সঠিক শিক্ষাটা পায়। কারণ যেমন সিস্টেমে অভ্যস্ত ছাত্ররা, তেমনই হওয়া উচিত
তাদের পাঠ্যবই!
No comments:
Post a Comment