Friday, January 6, 2017

দেখাই যাক এরপর কী হয়!


সবকিছুরই একটু একটু অভাব থেকে যাচ্ছে। আরেকটু সুশৃঙ্খল বোলিং, আরেকটু বেশি ইয়র্কার, আরেকটু ভালো ব্যাটিং, আরেকটু ভালো ফিল্ডিং—এসবের জন্য আফসোস করতে হচ্ছে প্রতি ম্যাচ শেষে। খুবই হতাশার কথা। এবারের নিউজিল্যান্ড সিরিজে অন্তত এত কিছুর জন্য আফসোস শুনতে কেউ প্রস্তুত ছিল না।

মনে করে দেখুন তো, নিউজিল্যান্ড সফরের উদ্দেশে দেশ ছাড়ার আগে কী বলেছিলেন ক্রিকেটাররা? বলেছিলেন, দেশের মাটিতে ভালো দল হয়ে ওঠার পর এবার দেশের বাইরে ভালো দল হয়ে উঠতে হবে। এটাই নাকি এই সিরিজের চ্যালেঞ্জ। তো ওয়ানডে সিরিজ এবং টি-টোয়েন্টি সিরিজও প্রায় শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেই চ্যালেঞ্জ জয়ের খবর কী? খবর হলো, নিউজিল্যান্ড সফরের লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ এ পর্যন্ত পুরোপুরি ব্যর্থ। আর বাকি একটি টি-টোয়েন্টি ও দুটি টেস্ট ম্যাচ। এই ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার সুযোগও তাই হাতে বেশি নেই।
অনেক দিন পর বিদেশের মাটিতে খেলা, নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে বাংলাদেশের খেলোয়াড়েরা অভ্যস্ত নয়—এভাবে দেখলে ব্যর্থতাটাকে হালকা করে দেওয়া যায়। তবে সে সুযোগ নেই। গত দুই বছরে এই খেলোয়াড়েরাই জিততে জিততে, সাফল্য পেতে পেতে এমন এক জায়গায় চলে গেছেন যে, সেখান থেকে দুম করে অনেক নিচে পড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক। হ্যাঁ, নিউজিল্যান্ডে এসেও নিউজিল্যান্ডকে ‘বাংলাওয়াশ’-এর স্বাদ দিতে হবে, এমন চিন্তা বাড়াবাড়ি। কিন্তু সিরিজ না জিতেও তো ভালো খেলা যায়! লড়াই করে অন্তত এই বার্তাটা দেওয়া যায় যে, বাংলাদেশ আসলেই উন্নতির ধারায় আছে। তাদের বিপক্ষে এখন কষ্ট করে জিততে হয়। মাশরাফি-সাকিব-তামিমরা এবার সেটাও পারেননি।
সিরিজে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সে রকম কোনো অর্জন নেই। শুধু হার আর ম্যাচ শেষে ‌‘অল্পের জন্য’, ‘একটুর জন্য’, ‘আরেকটু হলে’ জাতীয় কথাবার্তার আসলে কোনো অর্থই হয় না। সিরিজের তিনটি ওয়ানডে বাংলাদেশ হেরেছে ৭৭ রান, ৬৭ রান ও ৮ উইকেটে। প্রথম দুই টি-টোয়েন্টির হার ৬ উইকেট ও ৪৭ রানে। কোনো ম্যাচে বাংলাদেশ একেবারে নিউজিল্যান্ডের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে এসেছে, সেটা বলার উপায় নেই। দু-একটি ম্যাচের কিছু মুহূর্তে হয়তো মনে হয়েছে, ‘এই তো জেতার সুযোগ তৈরি হচ্ছে’। কিন্তু ‌এটুকুই যদি চাওয়া হবে, তাহলে তো বলতে হয় বাংলাদেশ দল সেই আগের দিনেই রয়ে গেছে। আসলেই কি তাই?
খেলোয়াড়েরা যদি মনে করেন নিউজিল্যান্ডে এবার যা হয়েছে তা অস্বাভাবিক নয়, তাহলে ধরে নিতে হবে এই দুই বছরে তাঁরা মানসিকভাবে কিছুই অর্জন করেননি। দলের মধ্যে এই বিশ্বাসটা তৈরিই হয়নি যে দেশের বাইরেও ভালো খেলা আসলেই সম্ভব। প্রত্যাশার ভারটা বইতে হবে। ক্রিকেটারদের কাছে প্রত্যাশাই যদি না থাকে, তাহলে আর কী হলো! অসাধারণদের কাছেই মানুষ অসাধারণ কিছু চায়। সাধারণের কাছে নয়।


নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনকেও এবার বাধা হিসেবে দেখানোর সুযোগ নেই। এখানে গ্রীষ্ম চলছে। এবারের সফরে যে রকম উইকেট আর আবহাওয়া পাওয়া গেছে, দেশের বাইরে এত বেশি ‘দেশি’ কন্ডিশন বাংলাদেশ আগে পেয়েছে কি না সন্দেহ। এমনকি মাশরাফি, তামিমরাও এমন উইকেটে ভালো খেলতে পারছেন না বলে আফসোস করছেন। এ রকম আফসোস এক-দুই ম্যাচে ঠিক আছে। এত ভালো কন্ডিশনে ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচে শুধু আফসোসই করে যেতে হলে সেটাকে কান্নার মতো শোনায়। তা ছাড়া মাঠে কী করলে ভালো কিছু হবে, সে ব্যাপারে প্রত্যেকের মুখেই অনেক বড় বড় কথা শোনা যায়। সেগুলোর বাস্তবায়ন যে বড়দের খেলায়ই নেই!
কাল দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি শেষে মাশরাফি যেমন আরেকটু সুশৃঙ্খল বোলিং, আরেকটি বেশি ইয়র্কার—এসবের জন্য আফসোস করলেন। আরেকটা আফসোস হ্যামস্ট্রিং চোটের কারণে টি-টোয়েন্টিতে মুশফিকুর রহিমের অনুপস্থিতি, ‘আমরা তো আমাদের সবচেয়ে বড় খেলোয়াড়কে মিস করে বসে আছি। মুশফিক...। কঠিন পরিস্থিতি যে সামলাতে পারে করে তাকে মিস করা আসলেই কঠিন।’
সৌম্যর রান পাওয়া, সাব্বিরের সঙ্গে তাঁর জুটি—ইতিবাচক দিক বলতে এ দুটিই ছিল কাল। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়েই লড়াই করার চেষ্টা ছিল তাঁদের ব্যাটিংয়ে। মাশরাফির ভাষায়, ‘সৌম্য ম্যাচ উইনার। আজ যেমন ৩৯ করেছে সুযোগ তৈরি হয়েছে। সত্যিকারের ম্যাচ উইনার দলে সবাই হয় না। কয়েকজন থাকে।’
মাশরাফির দুর্ভাগ্য, নিউজিল্যান্ডে এবার সেই কয়েকজনের একজনকেও পেলেন না ঠিকভাবে। তিনি তাই বলতে বাধ্য হলেন, ‘দল হিসেবে খেলাটাই এখনো মিসিং। পুরো দল হিসেবে আমরা খেলতে পারছি না। এখনো একটা ম্যাচ আছে, দেখা যাক কী হয়।’
দেখাই যাক কী হয়।

No comments:

Post a Comment

Sponsor