বাংলাদেশকে হালকাভাবে নিচ্ছি না’—সিরিজের আগে ক্রিকেটীয় সৌজন্য মেনে
শ্রীলঙ্কা এটাই তো বলে এসেছে এত দিন। কিন্তু এবার? এই ‘সৌজন্য’ দেখাচ্ছে
বাংলাদেশ!
টেস্টে একটা সময় নিয়মিত বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন যেসব
শ্রীলঙ্কান, তাঁরা কেউ এখন দলে নেই। মুত্তিয়া মুরালিধরন, কুমার সাঙ্গাকারা,
মাহেলা জয়াবর্ধনের মতো লঙ্কান কিংবদন্তিরা দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিয়েছেন
কবেই। এমনকি নিয়মিত অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসও এবার নেই। শ্রীলঙ্কার
মাটিতে টেস্টে জয়ের স্বাদ নেওয়ার সুবর্ণ সুযোগ মনে হচ্ছে এটাই। না, কাজটা
মোটেও সহজ হবে না মুশফিকদের জন্য। তারুণ্যনির্ভর এই শ্রীলঙ্কা দলে
হেরাথ-চান্ডিমাল-ধনঞ্জয়াদের মতো খেলোয়াড় আছেন, যাঁদের ক্ষমতা আছে হোম
কন্ডিশনের সুবিধা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানোর।
সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনে-দিলশানরা
যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে যেন রেখে গেছেন দিনেশ চান্ডিমালকে। বাংলাদেশের
বিপক্ষে চারটি টেস্ট খেলেছেন এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান, তিনটিতেই করেছেন
সেঞ্চুরি। গড়? চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো—১২৮.৩৩! বাংলাদেশের ক্রিকেট
ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকা সেই গল টেস্টেও সেঞ্চুরি আছে চান্ডিমালের। এবারও
যে ভোগাতে পারেন, তা জানিয়ে রেখেছেন মোরাতুয়ায় দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচে
অপরাজিত ১৯০ রান করে।
মুশফিকদের চোখ রাঙাতে পারেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও।
গত এক বছরে ৮ টেস্টে ৪৫ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ৬৭৫ রান করে
শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ২৫ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান।
গত আগস্টে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে ধবলধোলাইয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা। সিরিজে ৩ টেস্টে ৬৫ গড়ে ৩২৫ রান করে ছিলেন সবার ওপরে। ধনঞ্জয়ার
অসাধারণ ব্যাটিংয়ে গত অক্টোবর-নভেম্বরে জিম্বাবুয়াইনদের ধবলধোলাই করেছে
শ্রীলঙ্কা।
চন্ডিকা হাথুরুসিংহের নোটপ্যাডে রাখতে হবে কুশল মেন্ডিসের
নামটা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গত বছর শ্রীলঙ্কার যে দুর্দান্ত শুরু, সেিট
তাঁর হাত ধরেই। পাল্লেকেলেতে প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানে অলআউট শ্রীলঙ্কা
দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫৩ রান করে কুশলের ১৭৬ রানের ঝকঝকে ইনিংসটির সৌজন্যেই।
ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা জেতে ১০৬ রানে। দারুণ এই জয়ে আত্মবিশ্বাসী
শ্রীলঙ্কানরা পরে ধবলধোলাই করে অস্ট্রেলিয়াকে। ওই সিরিজে ৩ টেস্টে ৪৯.৩৩
গড়ে কুশল করেন ২৯৬ রান।
বাংলাদেশের জন্য হুমকি হতে পারেন দিমুথ
করুনারত্নেও। ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে
শ্রীলঙ্কানদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান তিনিই। ক্যারিবীয়দের সঙ্গে ২
টেস্টে ৬৬.৩৩ গড়ে ১৯৯ ও জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সমান ম্যাচে ৭০ গড়ে করেন ২৮০
রান। এই তিন তরুণের সঙ্গে জ্বলে উঠতে পারেন এক পুরোনো সেনানীও—উপুল
থারাঙ্গা। বাংলাদেশের বিপক্ষে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের রেকর্ডটা ভীষণ
উজ্জ্বল, ৩ ম্যাচে ৭৭.২৫ গড়ে করেছেন ৩০৯। টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ ১৬৫ রানও
বাংলাদেশের বিপক্ষেই।
বোলিংয়ে সবার আগে যাঁর নাম বলতে হবে, তিনি মুরালির
বিদায়ের পর শ্রীলঙ্কার বোলিংয়ের ভার বইছেন—রঙ্গনা হেরাথ। ২০১৫-এর অক্টোবর
থেকে এখন পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা যে তিনটি সিরিজ জিতেছে প্রতিটিতে শীর্ষ
উইকেটশিকারি বোলার ছিলেন হেরাথ। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাঁর রেকর্ডটা মুত্তিয়া
মুরালিধরনের মতো ভীষণ উজ্জ্বল না হলেও যথেষ্ট ভালো, ৬ টেস্টে নিয়েছেন ২৫
উইকেট। ২০১৩ সালের মার্চে গল টেস্টে অসাধারণ খেলার পর কলম্বোয় বাংলাদেশ
হেরেছিল হেরাথের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কাছেই, ম্যাচে ১৫৭ রান দিয়ে তুলে
নিয়েছিলেন ১২ উইকেট।
এবারও বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফর শুরু হচ্ছে গল
টেস্ট দিয়ে। গলে অতীতে স্পিনারদের দাপটই দেখা গেছে। এই স্পিন-স্বর্গে
মুত্তিয়া মুরালিধরনের পরই হেরাথের অবস্থান, ১৫ টেস্টে নিয়েছেন ৮৪ উইকেট।
বাংলাদেশের বিপক্ষে উইকেটের চরিত্র একই থাকলে ৩৮ বছর বয়সী লঙ্কান অধিনায়ক
নিশ্চয়ই কঠিন পরীক্ষা নেবেন তামিমদের।
হেরাথের সঙ্গে বাংলাদেশকে ভাবতে
হবে দিলরুয়ান পেরেরাকে নিয়েও। নিজের সর্বশেষ ৫ টেস্টে ২৩ উইকেট নেওয়া এই অফ
স্পিনারের স্মৃতিতে নিশ্চয়ই ফিরে আসবে গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গল
টেস্ট। এ ম্যাচে প্রথমবারের মতো ১০ উইকেট পেয়েছিলেন পেরেরা। আন্তর্জাতিক
ক্রিকেটে এখনো বড় সাফল্য না পেলেও ‘চায়নাম্যান’ বোলার লক্ষ্মণ সান্দাকানের
নামটিও মনে রাখতে হবে। এই ধরনের বোলিং খেলে তো অভ্যস্ত নন বাংলাদেশের
ব্যাটসম্যানরা।
গত দুই বছরে দেশের মাঠে খেলা চারটি সিরিজের দুটিতে
(ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া) শ্রীলঙ্কা জিতেছে প্রতিপক্ষকে ধবলধোলাই করে।
আর হেরেছে উপমহাদেশের দল ভারত ও পাকিস্তানের কাছে। কোন দলে থাকবে
বাংলাদেশ?
No comments:
Post a Comment