Thursday, March 16, 2017

শেষ আধঘণ্টার ‘পাগলামি’

আম্পায়াররা বেল তুলতে স্টাম্পের কাছাকাছি পৌঁছানোর আগেই উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান যেন দ্রুতই ড্রেসিংরুমে ফিরতে পারলে বাঁচেন। বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড দ্বিতীয় দিনের শেষ আধঘণ্টায় যে ছন্নছাড়া চেহারা নিয়েছে, সেদিকে যে তাকানো যাচ্ছিল না! ২ উইকেটে ১৯২ থেকে ৬ রানের মধ্যে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ ২১৪ রানে!
এই ধসের কোনো ব্যাখ্যা নেই। আবার দলটি বাংলাদেশ বলেই হয়তো যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে। তারা যে এমনটাই করে আসছে বারবার। অথচ সতর্কতার সঙ্গে পরিমিত আগ্রাসনে কী সুন্দর সূচনাই না হয়েছিল! তামিম-সৌম্য সিরিজে টানা তৃতীয়বারের মতো পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ওপেনিং জুটি গড়লেন।
গলের প্রথম ইনিংসে ১১৮ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে ৬৭ আর এখানে ৯৫। রঙ্গনা হেরাথের বলে তামিম ইকবাল ৪৯ রানে এলবিডব্লু হওয়াতেই ভাঙে জুটি।
সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস এই ভাঙনকে পরোয়া না করেই এগোচ্ছিলেন। কিন্তু সেই অগ্রগামিতা থেমে যায় ৩৫ রান পরেই, যখন সৌম্য চায়নাম্যান বোলার লক্ষ্মণ সান্দাকানের উল্টো বলে বিভ্রান্ত হয়ে হলেন বোল্ড। সৌম্য যেন বাংলাদেশের নতুন ‘মিস্টার ফিফটি’ হয়ে উঠতে চলেছেন। নিউজিল্যান্ডে প্রথম ফিফটির মুখ দেখা বাঁহাতি ওপেনারের টানা তৃতীয় ফিফটি হলো এবং এবারও সেটিকে রূপ দিতে পারলেন না তিন অঙ্কে। তৃতীয় উইকেটে ৬২ রানের জুটি গড়ার পথে ইমরুল ও সাব্বির রহমান বেশ দাপটেই ব্যাট চালাচ্ছিলেন, যেমনটা চালালে মনে হতে পারে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের পুরুষকার আছে। আর তারপর...। সেই পাগুলে মুহূর্ত, পাগলাটে শেষ আধঘণ্টা।
২ উইকেটে ১৯২ থেকে ৬ রানের মধ্যে আরও ৩ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ ২১৪ রানে!
সান্দাকান বোলিং করতে এসেছেন প্রেসবক্স প্রান্ত থেকে। দুটি বল ঠেকিয়ে তৃতীয় বলে দুর্দান্ত এক চার মারলেন ইমরুল কায়েস। পরের বলটিতে গেলেন পুল করতে। ওটা ছিল উল্টো বল, মানে গুগলি। বলের লাইন ভুল করে এলবিডব্লু। এর আগে ১০ রানে দিলরুয়ান পেরেরার অফ স্পিনে স্টাম্পিং হওয়ার একটা সুযোগ দিয়েছিলেন। পেসার সুরুঙ্গা লাকমলের বলে ২৫ রানে তাঁর ক্যাচ ফেলেছেন শ্রীলঙ্কার ‘ব্যাটিং বীর’ দিনেশ চান্ডিমাল। তারপরও ৩৪ রানে পৌঁছে এমন শট! কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে হয়তো বলবেন ইমরুলেরও ‘বুদ্ধিভ্রম’ হয়েছিল। কিন্তু সবাইকে কি তা বলে সান্ত্বনা দেওয়া যাবে? মুমিনুলের জায়গায় তিনে নেমেছেন, তিন টেস্ট পরে আবারও দলে এসেছেন নির্ভরতা দিতে, আর তিনিই কিনা এভাবে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন। ব্যাটিং পরামর্শক থিলান সামারাবীরার কিছু বলার নেই। শুধু বললেন, ‘আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। ওই পাগুলে শটটিই আমাদের বিপদে ফেলে দিয়েছে।’
দিনের তখন ৩ ওভার বাকি। ‘নাইট ওয়াচম্যান’ হিসেবে পাঠানো হলো তাইজুলকে। সামনে এগিয়ে পুশ করতে গিয়ে তিনি এলবিডব্লু পরের বলেই। হ্যাটট্রিক বলটি সাকিব এসে ঠেকালেন প্রায় বুনো এক সুইপে চার মেরে। পরের ওভারে সাব্বির ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট চালিয়ে লাকমলের বলে লেগ গালিতে পাতা ফাঁদে ক্যাচ। মাত্র ৭ বলের মধ্যে ৩ উইকেট নেই!
ওই সান্দাকানের ওপর চড়াও হতে গিয়ে সাকিব যেভাবে ব্যাট করলেন, সেটি টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং কিংবা ছুটির দিনের পাড়ার ক্রিকেট। ৮ বলে ৩টি চার, সাকিব অপরাজিত ১৮ রানে। এর মধ্যে আউট হতে পারতেন দুবার। ১১ রানে সান্দাকানের বলে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন, উপুল থারাঙ্গা ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তো নিতেই পারেননি, উল্টো সাকিব পেয়ে যান চার রান। ১৫ রানে লাকমলের বলে আবার তুলে দিয়েছিলেন স্কয়ার লেগে, দৌড়ে এসে তা ধরতে পারেননি চান্ডিমাল।
পি সারার রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেলে বাংলাদেশের কেউ নায়কোচিত আলোয় উজ্জ্বল হতে পারতেন। কিন্তু এমন ব্যাটিংয়ে সেটি কি আর হয়! দিনের প্রথম নায়ক ওই চান্ডিমাল। আগের দিনের অপরাজিত ৮৬ রানকে বেশ বড় সেঞ্চুরিতেই রূপ দিয়েছেন, মিরাজের বলে স্লগ করতে গিয়ে ১৩৮ রানে ক্যাচ দিয়েছেন মিড উইকেটে। বাংলাদেশকে পেলেই তাঁর ব্যাট লোভাতুর হয়ে পড়ে। এটি তাঁর অষ্টম সেঞ্চুরি, ক্যারিয়ারের প্রথম তিনটিসহ চারটিই বাংলাদেশের বিপক্ষে। হেরাথ ও লাকমলের সঙ্গে চান্ডিমালের অষ্টম ও নবম উইকেটে ৫৫ রানের দুটি জুটির পর লাকমল-সান্দাকানের ৩৩ রান আগের দিনের বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কাকে পৌঁছে দিয়েছে ৩৩৮ রানের বেশ ভালো একটা সংগ্রহে। সকালে সাকিব-মোস্তাফিজ-মিরাজদের নেতিবাচক বোলিং থেকেও কাল ঠিক ১০০ রান তুলে নিয়েছে হেরাথের দল।
চান্ডিমালের কথা তো বলাই হলো। নায়ক সান্দাকানও, তাঁর চায়নাম্যান বোলিংই তো মুশফিকদের এমন দিগ্ভ্রান্ত করে তুলল। তাঁদের হাসিটাকে একটু মলিন করে দিতে বাংলাদেশকে আজ আবার নামতে হবে সংগ্রামে। হাতে ৫ উইকেট, এখনো ১২৪ রান পিছিয়ে, তাজ সমুদ্র হোটেলে মুশফিকদের কক্ষগুলোতে নিশ্চিতই ভর করেছে সন্ধ্যার পি সারার থমথমে নীরবতা।
দ্বিতীয় দিন শেষে
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৩৩৮
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ২১৪/৫

No comments:

Post a Comment

Sponsor