Wednesday, March 8, 2017

স্বস্তির মধ্যে অস্বস্তির চোরাস্রোত

দ্বিতীয় দিনের শেষে
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৯৪
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৩৩/২

মাঠের সিটি প্রান্তে থাকা ডানহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য লং অন আর বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য লং অফ থেকে দৃষ্টি একটু সরালেই মহাসমুদ্রের অনন্ত অতল জলরাশি। বিশালতার প্রতীক। আরাম-আয়েশ করে সুখে-শান্তিতে বসবাসের উপযোগী উইকেটে শ্রীলঙ্কানরা সকালের সেশনে ওই মহাসমুদ্রের দিকে তাকিয়ে যেন ব্যাট হাঁকাচ্ছিলেন বিশাল স্কোরের আশা জাগিয়ে। কিছুটা নিজেদের ভুলে এবং অবশ্যই বাংলাদেশের বোলারদের কৃতিত্বে তাদের রান শেষ পর্যন্ত সেই রূপ পায়নি। ৯৬ রানে গেছে শেষ ৬ উইকেট, শ্রীলঙ্কা অলআউট ৪৯৪ রানে। জবাব দিতে নেমে কী দুর্দান্ত শুরুই না করেছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু দিন শেষে সেই দুর্দান্ত সূচনার মধ্যেও একটা অস্বস্তির কাঁটা যেন বিঁধছে মুশফিকদের মনে। সেই কাঁটার অস্তিত্বটা বোঝা গেল শেষ ঘণ্টায়। একেবারেই নির্দিষ্ট করে বললে শেষ ১০ ওভারে। চায়নাম্যান বোলার লক্ষণ সান্দাকানের বোলিংয়ে একটা রান নিয়ে স্ট্রাইক ধরে রাখতে বুদ্ধিভ্রম হলো তামিমের। অদ্ভুতুড়ে এক রানআউটের শিকার হলেন। ২৭ বল পর পিছিয়ে জোড়া পায়ে ডিফেন্স করতে গিয়ে অফ স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরার এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়লেন মুমিনুল। ৯ রানের মধ্যে ২ উইকেট নেই। এ দুজনকে হারানোর পর বাকি দিনের বাকি ৩৩টি বল পার করে দিতে কী সংগ্রাম! যা-ই হোক, সৌম্য সরকার আর মুশফিকুর রহিম চ্যালেঞ্জটা উতরে গেছেন। এটিকে যদি আপনি চ্যালেঞ্জ বলেন, মহা চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে আছে আজ পুরোটা দিনে।
শ্রীলঙ্কার উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নিরোশান ডিকভেলা তো কাল শেষ ঘণ্টায় তাঁদের স্পিনারদের বোলিং দেখে মহা উত্তেজিত। সাংবাদিকদের সঙ্গে যখন কথা বলছিলেন, তাঁর চোখ দুটি চকচক করছিল, ‘আমাদের স্পিনাররা শেষ বেলায় অসাধারণ বোলিং করেছে। এ জন্যই তো আমরা তিন স্পিনার নিয়েছি। আগামীকালও ওরা এ রকম বোলিং করবে।’ এর মানে আজ শ্রীলঙ্কান তিন স্পিনার বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের গলায় ফাঁস পরানোর জন্য তৈরি!
এই ফাঁসটাকে কোনো অবস্থাতেই চেপে বসতে না দিতে নিশ্চয়ই সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে নামবেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। প্রাথমিক দায়িত্ব অবশ্য দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান সৌম্য ও মুশফিকের কাঁধে। একটু ছটফটানির সঙ্গে ৪ রানে জীবন পাওয়া সৌম্যর নামের পাশে ৬৬ রান, যেটি তাঁর দ্বিতীয় টেস্ট ফিফটি। এই মাঠেই আগের টেস্টে দেশের হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি করা মুশফিক করেছেন মাত্র ১ রান। অধিনায়কের এই ১টা রান তো শুধু রান নয়, এটি হলো ধৈর্য আর সংযমের প্রতীক।
সৌম্য-মুশফিক তাঁদের কাজটা করে আসতে পারলে সাকিব, মাহমুদউল্লাহ, লিটন, মিরাজরা, চাই কি লেজের দিকে তাসকিন ও মোস্তাফিজও কিছু করতে চাইবেন। এক পা এগোলেই শততম টেস্ট। সুতরাং মাত্রই আগের সিঁড়িটাতে অর্থাৎ ৯৯তম টেস্টেও ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা নিশ্চয়ই সবার থাকবে। অনুপ্রেরণার কথা বললে সাকিব আল হাসানের কাছে সেটি বোধ হয় একটু বেশিই থাকে। এই টেস্টে ব্যাটিং করার আগে আবার ফিরে পেয়েছেন টেস্টসেরা অলরাউন্ডারের মুকুট, যেটি ১৫ মাস ধরা ছিল ভারতের রবিচন্দ্রন অশ্বিনের হাতে। সাকিবকে তাই বোলিংয়েও বেশ অনুপ্রাণিত লাগল। একটি উইকেটের খোঁজে প্রায় ৩৩ ওভার বোলিং করেছেন, সর্বশেষ ৯ ইনিংস আগে এক ইনিংসে এত বেশি বোলিং করেছেন এই বাঁহাতি স্পিনার। সেটি গত অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চট্টগ্রাম টেস্টে। বোলিংয়ে সফলতম নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। ১১৩ রানে শিকার ৪ উইকেট, যেটি দুনিয়া কাঁপিয়ে অভিষিক্ত এই অফ স্পিনারের বিদেশের মাটিতে সেরা। মিরাজের আনন্দটা বেশি হতে পারে আরেকটি জায়গাতেও, তাঁর বন্ধু মোস্তাফিজ দলের দ্বিতীয় সেরা বোলার। কাল অনেকটাই নিজেকে ফিরে পাওয়া বাঁহাতি তরুণ পেসারের নামের পাশে ২ উইকেট।
দেড় দিন ধরে বোলারদের জন্য প্রায় বধ্যভূমি হয়ে থাকা উইকেটে সব বোলারের মিলিত সাফল্যেই শ্রীলঙ্কাকে পাঁচ শ রানের আগে গুটিয়ে দেওয়া গেছে। কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের বিচারে যেটি দুর্দান্ত এক কৃতিত্ব। তাঁর আশা, দল ৬০০ রান করুক। তা না হলেও ইনিংস যতটা পারা যায় টেনে নেওয়া আর কি!
হাথুরুর আশাটাকে দিন শেষে মোটেই বাড়াবাড়ি মনে হতো না যদি একবার জীবন পেয়েও ওভাবে রানআউট না হতেন তামিম। তারপরও স্কোরবোর্ডে তাকালে কেউ বলতে পারবে না বাংলাদেশ খারাপ জায়গায় আছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ওপেনিং জুটি গড়ে ২ উইকেটে ১৩৩। কিন্তু আলোর নিচেই যে থাকে অন্ধকার! হেরাথ-সান্দাকান-পেরেরা নিশ্চিত করেই খয়াটে হয়ে পড়া উইকেটে স্পিনের বিষ ঢালতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
ওদের সেই প্রস্তুতিতে এখন জল ঢেলে দিতে হবে মুশফিকদের। তাহলেই অন্তত ড্র করেও জয় বাংলা কাপ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে একটা জয়ের অনুভূতিকে আপন করে পাওয়া হবে। জয়ধ্বনি তুলতে বড় বড় লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে শোয়েব আলীরা কিন্তু গ্যালারিতে হাজির প্রথম দিন থেকেই।

No comments:

Post a Comment

Sponsor