এই মেঘ এসে ঢেকে দিচ্ছে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠের আকাশ, খানিক পর
লাজুকভাবে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে সূর্য। দিনভর মেঘ-রোদ্দুরের লুকোচুরি খেলা কাল
চলল কলম্বোয়।
আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের
সম্ভাবনা নিয়েও এমন লুকোচুরি খেলবে বৃষ্টি? মাঠকর্মীরা মাঠ ও উইকেট
প্রস্তুতির শেষ কাজটুকু সেরে নিচ্ছেন। তার মধ্যে টুকটাক ব্যাটিং-বোলিং
অনুশীলন চলল মাশরাফির দলের। কিন্তু যতবার ওঁদের অনুশীলনের দিকে চোখ গেল,
ঠিক ততবারই চোখ গেল আকাশে। বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টির আশঙ্কাকে সত্যিই এক বড়
প্রতিপক্ষ মনে করছে বাংলাদেশ। এবং আশ্চর্য যে শ্রীলঙ্কার কাছেও এটি এখন
প্রতিপক্ষ!
ডাম্বুলার দ্বিতীয় ওয়ানডের মতো আজকের দিনের ম্যাচটিও যদি
তৃষ্ণার্ত বৃষ্টির পেটে চলে যায়, লাভ হবে বাংলাদেশের। ক্ষতিটা শ্রীলঙ্কার।
একটা ম্যাচ জিতেই প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ।
তবে প্রতিজ্ঞায়, প্রতিশ্রুতি আর আকাঙ্ক্ষায় নিবিড় থাকা মাশরাফির দলকে দেখে
মনে হয়নি, পরীক্ষা না দিয়েই তারা উত্তরণের গৌরবে ভাসতে চায়।
মাশরাফি-মোস্তাফিজ-তাসকিনদের
লক্ষ্যভেদী বোলিং (স্পট বোলিং) করিয়ে মাঠ ছাড়লেন পেস বোলিং কোচ কোর্টনি
ওয়ালশ। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, কেমন হলো, সব ঠিকঠাক?
উঁচু মাথাটা ওপর-নিচে দোলালেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি, ‘ইয়া, দে অল হিট দ্য
ডেক—সবাই ঠিক জায়গায় বল ফেলেছে।’
শুধু বোলিংয়েই লক্ষ্যভেদ করলে হবে না,
জিততে হলে সবকিছুই হতে ঠিকঠাক। স্কোরবোর্ডে রান জমা করতে হবে
ব্যাটসম্যানদের। ফিল্ডিংটাও হতে হবে টগবগে। ঠিক ডাম্বুলার প্রথম ম্যাচের
মতো। মাশরাফি জানেন, আহত বাঘের (নাকি সিংহ) মতো জয়ের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে
শ্রীলঙ্কা। তাই বললেন, ‘আমাদের অনেক ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে।’
সেই ভালো
ক্রিকেটের সংজ্ঞাটা প্রথম ম্যাচেই দেওয়া হয়ে গেছে। তামিম ইকবালের ব্যাট
থেকে এসেছে পরিণতিবোধের বিজ্ঞাপন হয়ে আসা এক সেঞ্চুরি। সাকিব আল হাসান ও
সাব্বির রহমান শ্রীলঙ্কান বোলিংকে চোখ রাঙিয়ে তুলে নিয়েছেন দুর্দান্ত দুটি
ফিফটি। শেষ ১০ ওভারে তাই তোলা গেছে ১০৯ রান। যার মধ্যে শেষ দুই ওভারে
মাহমুদউল্লাহ-মোসাদ্দেক জুটির ৩৩ রান ইনিংসকে দিয়েছে স্বর্ণোজ্জ্বল
সমাপ্তি।
তাতেই ৩২৪ রানের পাহাড়। আর সেদিকে ছুটতে গিয়ে
মাশরাফি-মোস্তাফিজ-তাসকিনের পেস, সুইং ও কাটার এবং সাকিব-মিরাজের স্পিনে
২৩৪ রানেই গুটিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। সঙ্গে অবশ্যই ছিল অসাধারণ ফিল্ডিং। এক
দিনের ক্রিকেটে এ এক স্বপ্নময় প্রদর্শনী, কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের চোখে
তাঁর দায়িত্বকালে দলের অন্যতম সেরা ক্রিকেট।
পরের ম্যাচটিতে অবশ্য
শ্রীলঙ্কাই অনেকটা বাংলাদেশের অনুকরণে তুলে নিয়েছিল ৩১১ রান। বৃষ্টি এসে
রোমাঞ্চের প্রতিশ্রুতি জাগানো ম্যাচটির অকালমৃত্যু ঘটাল। ম্যাচটি হলে পাওয়া
যেত বাংলাদেশের সামর্থ্যের আরেক প্রস্থ প্রমাণপত্র। কাল সংবাদ সম্মেলনে ওই
ম্যাচের সূত্র ধরেই শ্রীলঙ্কান সাংবাদিক সমাজের পক্ষে প্রশ্নটা তোলা হলো।
বাংলাদেশকে বৃষ্টিই কি সেদিন বাঁচিয়ে দেয়নি? অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা
নিরুত্তাপ, শান্ত মেজাজে যা বলে গেলেন, তার মর্মার্থ, ৩১১ অবশ্যই বড় রান।
কিন্তু তার দল ওটা তাড়া করার ব্যাপারে ছিল আত্মবিশ্বাসী। কেননা উইকেট ছিল
আরও বেশি ব্যাটিংবান্ধব।
দল বদলাতে পারে, যদিও বদল না হওয়ার সম্ভাবনাই
বেশি। মাশরাফি নিজেই যেমন বলেন, একাদশ নিয়ে কোচের মেজাজ-মর্জি বোঝা বড়
কঠিন। তবে বাংলাদেশ আজ এসএসসি মাঠেও ডাম্বুলার প্রথম দিনকে নামিয়ে আনতে
চায়। এই মাঠের উইকেট যদিও একটু অন্য রকম মনে হচ্ছে। গত ছয় বছর এখানে কোনো
এক দিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় না।
যদিও গুচ্ছ গুচ্ছ লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ
এখানে হয়েছে। তাতে প্রথমে ব্যাট করা দলের গড় রান হয়েছে ১৪৬। এটি বাংলাদেশের
কোচ হাথুরুসিংহের কাছে একটু উদ্বেগের। এমনিতেই একটু নিচু বাউন্সের শুষ্ক
পিচ, তার ওপর পরশু পর্যন্তও ছিল অপ্রস্তুত। শেষ দুই দিনে বড় রকমের কোনো
পরিবর্তন না হলে ডাম্বুলার মতো রানগর্ভা এটির হওয়ার কথা নয়। মাশরাফি কিছু
তথ্য-উপাত্ত নিয়ে দেখেছেন, এক দিনের আন্তর্জাতিকে এখানে গড় রান ২৭০-২৯০।
তবে প্রতিপক্ষকে অত দূর পর্যন্ত রানের লাগাম ছুটিয়ে যেতে দিতে রাজি নন
তিনি, ‘আমরা চাইব ওদের আরও কম রানে বেঁধে ফেলতে। ডাম্বুলায় দ্বিতীয় ম্যাচে
উইকেট যদিও ভালো ছিল, আমাদের উচিত ছিল ওদের ২০-২৫ রান বাড়তে না দেওয়া।’
বাংলাদেশের
বর্তমান দলটির কারোরই খেলার অভিজ্ঞতা নেই এসএসসিতে। এই মাঠে বাংলাদেশের
ওয়ানডে ম্যাচের অভিজ্ঞতাও সুখের নয়। ১০ ম্যাচ খেলে ৯টিতেই হার। একমাত্র
জয়টি এশিয়া কাপে বাংলাদেশের প্রথম, সেটিও সেই ২০০৪ এশিয়া কাপে পুঁচকে
হংকংয়ের বিপক্ষে।
এই মাঠ অচেনা থাকতে পারে, এখানে খেলার অভিজ্ঞতার
ভান্ডার হতে পারে শূন্য; তাতে কি কিছু এসে যায়? নতুন থেকেই তো শুরু হয়
সাফল্যযাত্রা। বাংলাদেশ আজ এসএসসিতে নতুন পতাকা ওড়াতেই পারে। তাহলে
জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের খর্বশক্তির দলের বিপক্ষে পাওয়া ওয়ানডে সিরিজ
জয়ের পর এটিই হবে সত্যিকারের সাফল্য। তাতে র্যা ঙ্কিংটা সাতে হবে বেশ
জোরালো। আর বড় দল হয়ে ওঠার একটা বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া যাবে বিশ্বময়। বাংলাদেশ
যে এখনো ক্রিকেটকুলপতিদের চোখে বড় হয়ে ওঠার স্বপ্ন চোখে এক ডানা ঝাপটানো
পাখি!
No comments:
Post a Comment