মুশফিকুর রহিমের পরিবর্তে স্টাম্পের পেছনে এর আগেও দেখা গেছে অন্য
উইকেটকিপার। তবে সেটা আপত্কালীন ব্যবস্থা হিসেবে। মুশফিকের ক্যারিয়ারের
তৃতীয় টেস্ট থেকে শুধু তাঁর চোট বা বিশ্রামের কারণেই কয়েকবার বিকল্প
উইকেটকিপার খুঁজতে হয়েছে। ক্যারিয়ারের ৫২ টেস্টের ৪৭টিতেই বাংলাদেশ দলের
মূল উইকেটকিপার ছিলেন মুশফিক।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের দীর্ঘ এই অধ্যায়
অবশেষে শেষ হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে অধিনায়ক মুশফিক খেলবেন
শুধু বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলবেন
লিটন দাস। মোরাতুয়ার টাইরনে ফার্নান্ডো স্টেডিয়ামে আজ থেকে শুরু দুই দিনের
প্রস্তুতি ম্যাচেই কার্যকর হচ্ছে এই পরিবর্তন। পরশু কোচ চন্ডিকা
হাথুরুসিংহে ও ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ আনুষ্ঠানিকভাবে মুশফিককে তাঁদের
সিদ্ধান্ত জানান। মুশফিক তা মেনে নিয়েছেন। তবে সন্তুষ্টচিত্তে নয়।
মুঠোফোনে
কাল ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ জানিয়েছেন, ‘আমি ও কোচ অফিশিয়ালি মুশফিককে এটা
জানিয়েছি। ও দলের সেরা ব্যাটসম্যান। মুশফিক এখন যে রকম দুর্দান্ত ফর্মে
আছে, আমরা মনে করি, ব্যাটিংয়ে সে আরও কিছু দিতে পারে। সে জন্য টেস্টে সে
চার নম্বরে ব্যাটিং করবে এবং উইকেটকিপিং করবে না। সবচেয়ে ভালো যেটা,
সিদ্ধান্তটা মুশফিক ইতিবাচকভাবে নিয়েছে।’ শ্রীলঙ্কা দল থেকে উদাহরণ টেনেই
মুশফিককে বুঝিয়েছেন কোচ-ম্যানেজার। ‘ওকে বলেছি, উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান
থাকার সময় কুমার সাঙ্গাকারার রানের গড় ছিল ৩৮, কিপিং ছাড়ার পর ৬০।
ম্যাককালামের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। একসঙ্গে কিপিং, অধিনায়কত্ব ও
ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা কঠিন কাজ’—বলেছেন মাহমুদ।
ম্যানেজার মুশফিক
ব্যাপারটি ‘ইতিবাচকভাবে’ নিয়েছেন বললেও বাস্তবে সেটি নয় বলেই জানা গেছে।
টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানতে কাল মুঠোফোনে মুশফিকের
সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথমে তিনি কিছুই বলতে রাজি হননি। পরে সংক্ষিপ্ত
প্রতিক্রিয়ায় বললেন, ‘দলের ভালোর জন্য যেটা দরকার, আমি সেটাই করব।’ তবে
পরের বক্তব্যে অনেকটাই পরিষ্কার, টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত না মেনে
উপায় নেই বলেই অনুরোধে ঢেঁকি গিলছেন সবচেয়ে বেশি ম্যাচে বাংলাদেশ দলের
উইকেটকিপারের দায়িত্ব পালন করা মুশফিক, ‘ম্যানেজমেন্ট যখন সিদ্ধান্ত
দিয়েছে, সেটা তো মানতেই হবে।’
২০০৫ সালে লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে
নিজের অভিষেক টেস্টে, ২০০৬ সালে বগুড়ায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবং ২০১৫ সালে
ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন টেস্টে মুশফিক খেলেছিলেন বিশেষজ্ঞ
ব্যাটসম্যান হিসেবে। মজার ব্যাপার, উইকেটকিপার হিসেবে মুশফিকের আন্তর্জাতিক
অভিষেক এই শ্রীলঙ্কাতেই। ২০০৭-এর শ্রীলঙ্কা সফরের প্রথম টেস্টে খেলেননি।
কলম্বোর পি সারাভানামুত্তু স্টেডিয়ামের দ্বিতীয় টেস্টে খালেদ মাসুদকে বসিয়ে
কিপিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় মুশফিককে। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান মুশফিকের সেই
শুরু। ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রথম ইনিংসে ৯ রানে আউট হয়ে গেলেও দ্বিতীয়
ইনিংসে সাতে নেমে করেছিলেন ৮০। মুশফিকের যে মাঠে প্রথম কিপিং গ্লাভস পরা,
এবার সেই পি সারাতেই বাংলাদেশ দল খেলবে তাদের শততম টেস্ট।
আজ থেকে শুরু
দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচের ভেন্যুও বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক। ১৯৮৬ এশিয়া
কাপে মোরাতুয়ার এ মাঠেই নিজেদের প্রথম ওয়ানডে খেলেছিল বাংলাদেশ দল।
প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান। কিন্তু এবার প্রতিপক্ষ কারা? বিস্ময়কর হলেও
সত্যি, আজ খেলা শুরু হলেও কাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশ দল জানত না কাদের
বিপক্ষে খেলবে। পরে মাঝরাতে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট জানিয়েছে দলের নাম। দিনেশ
চান্ডিমালের নেতৃত্বে খেলবে শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট একাদশ।
শ্রীলঙ্কায়
বাংলাদেশ দলের গত দুই দিনের অভিজ্ঞতায় জমা হয়েছে আরও কিছু তিক্ততা।
বিমানবন্দরে দলের অভ্যর্থনা বলতে তেমন কিছুই হয়নি। শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের যে
দু-একজন কর্মকর্তা বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন, তাঁরাও ছিলেন মূল গেটের বাইরে। এ
ছাড়া ছোটখাটো অনেক সাহায্য চেয়েও নাকি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে
দলকে।
শ্রীলঙ্কা কি তবে খেলার আগেই ‘খেলা’ শুরু করে দিল!
No comments:
Post a Comment